শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৫৭ অপরাহ্ন

News Headline :
মানববন্ধনের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন শ্যামনগরে গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে সড়কে ভ্যান চালকের মৃত্যু রাজশাহীর মোহনপুরে মদ পানে ৩ জনের মৃত্যু, গ্রেফতার ২ রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র সাতটি থানার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা যানজট নিরসন দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে আরএমপি’র মতবিনিময় সভা শ্যামনগরে এবার কৃষকরা আমন ধানের আশানুরুপ ফলন পেয়েছে পাবনায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহত ১জন আহত শাজাহানপুরে বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে ছাত্রদলের দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত মান্দায় বিল উন্মুক্তের দাবিতে জেলেদের সংবাদ সম্মেলন সভাপতির স্বৈরাচারী আচরন স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতিতে পাবনা শহর সমাজ সেবা কার্যালয়ের কার্যক্রম স্থবির

যৌন হয়রানির অভিযোগে শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষকের শাস্তি নিয়ে বিভ্রান্তি

Reading Time: 2 minutes

মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগে দু’বছরের জন্য অব্যহতিপ্রাপ্ত এক শিক্ষকের শাস্তি নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। ভুক্তভোগী শিক্ষিকার দাবি, অব্যহতিপ্রাপ্ত শিক্ষক অবাধে বিভাগে যেতে পারবেন না। অন্যদিকে, অব্যহতিপ্রাপ্ত শিক্ষকের দাবি, তাকে শুধু একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ থেকে অব্যহতি দেয়া হয়েছে, শিক্ষকতা পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়নি। তাই, তিনি তার প্রয়োজনে বিভাগে যেতেই পারেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও বলছে, অব্যহতিপ্রাপ্ত শিক্ষক তার শাস্তির আওতার বাইরের যেকোনো জায়গায় বা তার চেম্বারে যেতে পারবেন। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তটি অস্পষ্ট মনে হলে, তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চাইতে পারেন।
এদিকে অব্যহতিপ্রাপ্ত শিক্ষকের শাস্তি কার্যকর করার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে গত ৪ মার্চ উপাচার্য বরাবর আবেদনপত্র দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষিকা। ওই চিঠিতে তিনি বলেছেন, যৌন হয়রানির অভিযোগে সিন্ডিকেট কর্তৃক অব্যহতিপ্রাপ্ত অধ্যাপক এনামুল হক চলতি বছরের ২৫ ফেব্রæয়ারি বিভাগের নতুন সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বিভাগের সভাপতির কক্ষে অবস্থান করেছেন, অফিস সেমিনার লাইব্রেরিসহ সবখানে থাকছেন।
তিনি বিভাগের কোনো অস্থাবর সম্পত্তি ফেরৎ প্রদান করেননি (ল্যাপটপ, কম্পিউটার প্রিন্টার, বই পুস্তকসহ অন্যান্য সামগ্রী)। সিন্ডিকেট কর্তৃক শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষক বিভাগে এহেন অবস্থানে শাস্তি বাস্তবায়ন হচ্ছে না, উপরন্তু তাকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনাপূর্বক শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষকের বিভাগে অবাধ বিচরণ বন্ধ করে তার শাস্তি কার্যকরের জন্য অনুরোধ করছি।
এ বিষয়ে শাস্তিপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. এনামুল হক বলেন, আমার শাস্তি হিসেবে রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত নোটিশে বলা হয়েছে, ‘আপনাকে দুই বছরের জন্য শ্রেণীকক্ষে ও গবেষণাগারে গিয়ে নির্দিষ্ট কোর্সসমূহে পাঠ্যদান, পরীক্ষা সংক্রান্ত কার্যাদি, গবেষণা তত্ত¡াবধান এবং সকল প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।’ আমিতো এই কাজগুলোর কোনোটাই করিনি। আমাকেতো আমার শিক্ষকতা পদ থেকে অব্যহতি দেয়া হয়নি। আমাকে বেতন-ভাতা দেয়া হয়। আমার নিজস্ব কাজতো আমি করবোই। সুতরাং, আমি অফিসে বা আমার চেম্বারে যাবো, ওয়াশরুম ব্যবহার করবো, এটাইতো স্বাভাবিক। নতুন সভাপতি দায়িত্বগ্রহণের পর থেকে যাওয়া শুরু করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা সত্য নয়। উনি (অভিযোগকারী) সভাপতি থাকাকালেও আমি বিভাগে গিয়েছি। তিনি সভাপতি থাকাকালীন, আমি যে ওয়াশরুমটা ব্যবহার করি, সেটা পরিষ্কার করতে নিষেধ করেছিলেন সুইপারকে। এমন নিম্নমানের কাজও করেছেন তিনি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের বাইরে মন্তব্য করার সুযোগ নেই। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে (অধ্যাপক এনামুল) একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ থেকে অব্যহতি দেয়া হয়েছে। তাকেতো বরখাস্ত করা হয়নি। শাস্তির আওতার বাইরের অন্য কোথাও বা তার চেম্বারে যেতেই পারেন। সিদ্ধান্তটি তাদের কাছে অস্পষ্ট মনে হলে, তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চাইতে পারেন।
দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি বা কাজ ছাড়া বেতন-ভাতা পাওয়াকে শাস্তি বলা যায় কিনা জানতে উপ-উপাচার্য আরো বলেন, যোগ্যতা দিয়েই একজন ব্যক্তি শিক্ষক হয়। তখন শিক্ষকতা তার অধিকার হয়ে যায়। কোনো অপরাধের শাস্তিস্বরূপ তাকে তার ওই অধিকার থেকে সাময়িক বা স্থায়ীভাবে অব্যাহতি দেয়া অবশ্যই শাস্তির মধ্যে পড়ে। শাস্তি মানেতো শুধু তাকে সব অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে হবে, এমন না। সরকারি বিধি-বিধান অনুযায়ীই শাস্তি দেয়া হয়। উল্লেখ্য, গতবছরের ১৯ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ৫২৫তম সিন্ডিকেট সভার ৩৮ নং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যৌন হয়রানির অভিযোগে মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এনামুল হককে সিন্ডিকেট সভার দিন হতে পরবর্তী দুই বছরের জন্য শ্রেণিকক্ষে ও গবেষণাগারে গিয়ে নির্দিষ্ট কোর্সসমূহে পাঠ্যদান, পরীক্ষা সংক্রান্ত কার্যাদি, গবেষণা তত্ত¡াবধান এবং সকল প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। জানা যায়, গতবছরের ২১ মে মনোবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতির কক্ষে বিভাগীয় সভা চলাকালে বিভাগের তখনকার সভাপতি অধ্যাপক মাহবুবা কানিজ কেয়ার সঙ্গে অধ্যাপক এনামুল হকের বাগবিতÐা হয়। অধ্যাপক এনামুল অশালীন অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করেছেন দাবি করে উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন সভাপতি। কিন্তু অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে পাল্টা অভিযোগ দেন অধ্যাপক এনামুল। এর পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেই কমিটির সুপারিশক্রমে সিন্ডিকেটে অধ্যাপক এনামুলকে দুই বছরের জন্য অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সিন্ডিকেটের এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে তখন অধ্যাপক এনামুল হক মন্তব্য করেছিলেন, ভিন্ন মতাদর্শের হওয়ায় তাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করতেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অধ্যাপক এনামুল বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া পরিষদের বর্তমান সভাপতির দায়িত্বে আছেন। এর আগে তিনি জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের আহবয়ক ছিলেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Design & Developed BY Hostitbd.Com